হটাৎ সন্ত্রাসী অভিযোগে গ্রেফতার এবং কিছু প্রশ্ন

বহু বছর জেল খাটার পরে বেকসুর খালাস — ৫ বছর, ৯, ১১, ১৬ এমনকি ২৫ বছর জেল খাটাও আছে — খবরের চিত্র গুলি দেখলাম।

খবরগুলি দেখে আনন্দিত হবো,  নাকি দুঃখিত হবো — ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। কারণ ভিতরে এক অদ্ভুত রাগ হচ্ছিল,  যন্ত্রণা হচ্ছিল। আমাদের সীমিত জ্ঞান-বুদ্ধিতে  কিছু ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনা।

এমন নয় যে এই প্রথম এরকম খবর দেখলাম।  প্রায়ই খবর পাওয়া যায়। এই যে ১১ কিংবা ১৬ বছর পর কয়েকজন বাড়ি ফিরে এলো।  খুব খুশির খবর?  সেই ১১ বছর তার কে ফিরিয়ে দেবে? তার ঘর-সংসার, ছেলেমেয়ে — তারাও তো সমানে জেল খেটে গেল বাড়িতে বসেই।

১. আচ্ছা,  এরকম হয় কেন? বিনা বিচারে কত দিন আটকে রাখা যায়? এ নিয়ে আইন কী বলে?

২.  শুনেছি অপরাধ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত আটক ব্যক্তি নিরাপরাধ। বিচারের সুবিধার জন্য তাকে আটকে রাখা। তাহলে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদির সাথে একসঙ্গে তাদের জেলে রাখা হয় কেন? অপরাধী ও নিরাপরাধের কি একই শাস্তি?  আইনে কি এরকম ব্যবস্থা আছে?

৩.  শুনেছি ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশীট দিতে হয়। তার বেশি হলে জামিন দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে সেরকম হয়না কেন?

৪.  ১৬ বছর পরে প্রমাণ হলো নিরাপরাধ। অর্থাৎ তার বিরুদ্ধে কেউ বা কারা মিথ্যে অভিযোগ করেছিল যার জন্য তাকে অন্যায় ভাবে জেল খেটে যেতে হলো। যাদের দোষে তাকে মিথ্যা জেল খাটতে হলো তাদের বিচার হবে তো? তারা শাস্তি পাবে তো? আইন কী বলে? এমন আইন আছে তো?

৫.  এখানে সবাই মুসলমান।  তাহলে কি শুধু মুসলমানরাই এরকম রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার?  অমুসলিমরা এরকম জেল খাটে না?

৬. শুনেছি ভারতের জেল গুলিতে ৪ কোটি কয়েদি আছে, যার মধ্যে প্রায় ৩ কোটি আসামী বিচারাধীন বন্দি। তাদের অপরাধ প্রমাণ হয়নি। ৫, ১০, ১৫ এমনকি ২০ বছর ধরেই নাকি আছে। কেন এমন হয়? সংবিধান কী বলে। এটা যদি বেঠিক হয় তাহলে এ নিয়ে বিরোধী দলগুলি আন্দোলন করে না কেন? পার্লামেন্টে, মিডিয়ায় হৈ চৈ হয় না কেন?

৭. শুনেছি এই ৩ কোটির মধ্যে প্রায় ৮০ লক্ষ মুসলমান। অর্থাৎ জনসংখ্যার  স্বাভাবিক অনুপাতের দ্বিগুণ।  এবং এদের অধিকাংশই ভীষণ দরিদ্র, প্রায় নিরক্ষর,  জামিনের টাকাটাও তাদের দেবার ক্ষমতা নেই। জানি না কথাগুলি কতটা সত্যি। যদি সত্যি হয়, তাহলে মুসলিম সমাজের মাথায় যারা আছেন, উকিল-মোক্তার এবং অর্থশালী নেতারা আছেন — তারা কি কিছু উদ্যোগ নিয়ে থাকেন? হয়ত নিয়ে থাকেন,  আমরা জানিনা।

কি জানি, কেমন সব এলোমেলো হয়ে যায়