কিছু দিন আগে একটা ঘটনা কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় অনেক বিতর্ক দেখলাম, ভাগ্য বসত আমি সেই প্রোগ্রাম এ উপস্থিত ছিলাম. তাই একজন একজন দর্শক হিসেবে ও নিজের সামাজিক দায় থেকে কিছু লেখার চেষ্টা করলাম l যেহেতু ঘটনার দিন ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনাবলী ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে প্রত্যক্ষ করেছি তাই আমার লেখাটা ও জরুরি বলে মনে করলাম.
দিনটি ছিল 30 শে এপ্রিল 2023, পার্ক সার্কাসের, ইন্ডিয়ান সাইন্স কংগ্রেস অডিটোরিয়ামে একটা ঈদ মিলন উৎসব এর আয়োজন করা হয়েছিল যার সময় ছিল দুপুর দুটো থেকে সন্ধ্যা ছয়টা I দুটোর পর থেকেই সেদিন দর্শক আসতে শুরু করে I এটি ছিল একটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পারিবারিক মিলন অনুষ্ঠান তাই স্বভাবতই সকলে এমনকি উদ্যোক্তাদের মধ্যে অনেকেই তাদের পরিবার ও বাচ্চাদের সঙ্গে সেই আনন্দ অনুষ্ঠানে শামিল হন I কোরআন তেলাওয়াত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয় একে একে গজল,গান, কবিতা বক্তব্য বক্তব্যের মধ্য দিয়ে উৎসব মুখরিত হচ্ছে, বড়রা বাচ্চারা সবাই অনাবিল সতস্ফুর্ত পরিবেশন করছেন, আর পাঁচটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মতই I
এই অনুষ্ঠানের একটি পর্ব ছিল একটি উদ্যোক্তা সংগঠনের ম্যাগাজিন প্রকাশ, সেটিও চিরাচরিত ভাবেই সম্পাদিত হয় I প্রসঙ্গত বলে রাখি অনুষ্ঠানের একটি বক্তব্যে কিঞ্চিৎ ছন্দপতন হয় কারণ অন্যান্য বক্তার মতই সেই বক্তাকে সময় সংকুলানের জন্য সঞ্চালক বক্তব্য দীর্ঘায়িত না করার অনুরোধ করেন কিন্তু কিন্তু সেটি মাননীয় বক্তার ক্রোধের কারণ হয় এবং তিনি খুব রাগান্বিত হন I তার বক্তব্যের মধ্যে সেই ক্ষোভ ও উষ্মা প্রকাশ করেন I অনুষ্ঠানের প্রথম ছন্দপতন এখানেই I অনুষ্ঠান আবার নিজের ছন্দে এগোতে থাকে সফলতার অভিমুখে I
বাচ্চাদের কলকাকলি, মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সভাগৃহ তখন আনন্দঘন এবং সময় শেষের দিকে I সময় তখন সন্ধে 5:30, সভাগৃহের সময়সীমা সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত I এই সময়টাকে সর্বসাধারণের বক্তব্য জন্য উন্মুক্ত করা হয় I এই পর্যায়ে উপস্থিত দর্শকরা সুচির বাইরে গিয়েও অংশগ্রহণ করে I এইরকমই এক যুবক দর্শক অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় ছন্দপতনটি ঘটায় I তিনি অনুষ্ঠানে “ফ্রি মিক্সিং” নিয়ে অভিযোগ করেন I মুসলিমদের ঈদ মিলন অনুষ্ঠানে অমুসলিম অতিথিদের প্রবেশাধিকার নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন I অনুষ্ঠানে আগত অমুসলিম অতিথিদের অসম্মানের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য সংগঠকরা তাকে এসব বলা থেকে বিরত থাকার প্রথমে অনুরোধ করেন কিন্তু তিনি থামলেন না এবং পরবর্তী অভিযোগটি করেন সেটি ওই অনুষ্ঠানে পঠিত এক লেখিকার কবিতা কে কেন্দ্র করে I
অভিযোগকারীর মতে কবিতাটি নাকি সমকামীদের সমর্থন করে লেখা যদিও ভাষা জগতের মানুষের মতামত এ প্রসঙ্গে ভিন্ন, তাদের মতে কবিতাটিতে অন্যধারার মানুষের এক নিদারুণ ব্যথা ও যন্ত্রণার প্রকাশ পেয়েছে I সভায় অংশগ্রহণকারী ও অতিথিদের সম্মান বাঁচানোর তাগিদে যুবকটিকে থামানোর চেষ্টা করা হয় এবং একটি বিতর্কময় অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি তৈরি হয় I ইতিমধ্যে ঘড়িতে তখন সন্ধ্যা ছয়টা, সময়সীমা শেষ I অডিটোরিয়ামের কর্মকর্তারা হল ছাড়ার অনুরোধ করতে থাকেন এবং বাধ্য করেন I
এই পুরো ঘটনাটি একটি তাৎক্ষণিক অনভিপ্রেত ঘটনা অবশ্যই, কিন্তু তারপর থেকে শুরু হয়ে যায় ক্ষোভ ও ঘৃণার নক্কারজনক বহিঃপ্রকাশ I সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা কে যে কতটা অত্যুক্তি করে একটি নির্দিষ্ট অভিমুখ দেওয়ার চেষ্টা করা হয় তা প্রত্যক্ষ করলাম আর ভাবতে লাগলাম হায়রে আমার অভাগা সমাজ I
এতক্ষণ পর্যন্ত চলছিল একটি অনভিপ্রেত ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে, কিন্তু তার পরবর্তী নির্মাণ আরো ভয়ঙ্কর, যেখানে একটি বাংলা দৈনিক তাদের মিথ্যা ও মনগড়া কাহিনী দিয়ে দিয়ে একটা পুরো শিক্ষিত সাংস্কৃতিক সংগঠন তথা সমাজকে বিশেষ একটি তকমা দেওয়ার চেষ্টা করছে আর অবশ্যই সুচারু খেলোয়াড়ের মত ধর্মকে হাতিয়ার করে একের পর এক মুচমুচে মুখরোচক খবর পরিবেশন করে চলেছে I সাংবাদিকতার নামে মিথ্যাচারিতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতা কিভাবে এক জাতিকে ঘৃণাযুদ্ধের দাবানলে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করানো হয় দেখলাম I
Azizul Mondal has written this and opinion is his personal.